ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ , ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মোজাম্মেল বাবু ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ নতুন মামলায় গ্রেফতার উগ্র জাতীয়তাবাদ বড় অর্জনের পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে-শিক্ষা উপদেষ্টা নাসির-তামিমার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, ২৮ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থন বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের বৈঠক শোক সংবাদ ছয় দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ২০ কিশোর বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সাজা শেষেও কারাগারে ১৫৪ বিদেশি বন্দি অবরোধ বৃষ্টি ও যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি কুয়েটের সাবেক ভিসিসহ ১৫ জনের নামে আদালতের নির্দেশে ২ মামলা সেই আলোচিত কর কর্মকর্তাকে পুনর্নিয়োগ ডিএসসিসি’র নতুন দল নিয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সংলাপে বসবে-ইসি বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় শিগগিরিই বাস্তবায়ন হবে -প্রধান বিচারপতি জাতি তাকিয়ে আছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে-ড. ইউনূস সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় অসন্তুষ্ট বিএনপি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে না ইসরায়েলের লালমাইয়ে নিখোঁজ শিশুর মাথার খুলি হাড় উদ্ধার নারী হত্যায় স্বামীসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড স্বাস্থ্যের সেই গাড়িচালকের ৫, স্ত্রীর ৩ বছর দণ্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর * ৩ কোটি ৩ টাকায় ৫০০ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে বে-টার্মিনাল * টার্মিনালে একইসঙ্গে ভিড়তে পারবে ৩৫ থেকে ৫০টি জাহাজ *কাজ শেষ না হওয়ায় নানা প্রশ্নের মুখে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প * বে-টার্মিনাল চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বহুগুণ বাড়বে

​বে-টার্মিনাল প্রকল্প দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি

  • আপলোড সময় : ২২-০৮-২০২৪ ০২:০১:৫৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-০৮-২০২৪ ০২:০১:৫৭ অপরাহ্ন
​বে-টার্মিনাল প্রকল্প দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। বিদেশি অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প চলমান। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্তমানে যে জেটিগুলো কার্যকর ও নির্মাণাধীন আছে সেগুলোই এখনো ঠিকমতো ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসব জেটির  মাত্র ৫০ ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষকে মাত্র ৩ কোটি ৩ টাকায় ৫০০ একর জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রাক্কলন তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তর হালিশহর মৌজার জমি এবং দক্ষিণ কাট্টলী, মধ্য হালিশহর দক্ষিণ হালিশহর মৌজার জমি বন্দোবস্ত দিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। নানা চিঠি চালাচালি শেষে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিনভাবে বে-টার্মিনালের জায়গা বুঝে পেতে কাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মামলা ছাড়া ৫০০ একর অকৃষি খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় বিভিন্ন আদালতে মামলাভুক্ত প্রায় ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। বে-টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় ২৬৭ একর সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে গেজেটভুক্ত জমি পাওয়া যায়। যদিও সেখানে বাস্তবে বনভূমি দূরে থাক, ভালো করে গাছও নেই। এসব জমি বন বিভাগ সরেজমিনে তদন্ত করেও বনের অস্তিত্ব পায়নি। বর্তমানে এসব জমি ডি গেজেটভুক্ত অর্থাৎ গেজেট থেকে অবমুক্ত করে খাস জমি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার জন্য ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। খাস জমি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হলেই জমিগুলো পুনরায় বন্দোবস্ত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর ৮২০ দশমিক ৫৫৭৫ একর জমি বরাদ্দ পেতে প্রস্তাবনা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন দুটি বন্দোবস্ত মামলা সৃজন করে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এ সময় বন্দোবস্তের আনুমানিক মূল্য ধরা হয় ১০ হাজার ২১৮ কোটি ২২ লাখ ৩২ হাজার ৩০১ টাকা। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় মামলা-মোকদ্দমা এড়াতে খাস জমি অধিগ্রহণের পরামর্শ দেয়। এতে করে বন্দোবস্ত ফাইল দুটি চট্টগ্রামে ফেরত আসে।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৮ সালের ১০ জুলাই জেলা প্রশাসন বরাবর ৮০৩ দশমিক ১৭১০ একর ভূমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবনা দেয়। এর মধ্যে ৮০২ দশমিক ৩৮৩৫ একর খাস এবং শূন্য দশমিক ৭৮৭৫ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। জেলা প্রশাসন হয়ে সেই প্রস্তাবনা আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলে যায়। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির ১২০তম সভায় অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। একই বছরের ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ মামলা সৃজন করে এবং এর মূল্য ধরা হয় ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৪১ টাকা। তবে বন্দর এসব অধিগ্রহণের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং প্রতীকী মূল্যে জমি বরদ্দ দিতে আবেদন করেন। এরপর ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রতীকী মূল্যে খাস জমি বরাদ্দ নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ভূমি মন্ত্রণালয় অধিগ্রহণ প্রস্তাব বাতিল করে বন্দোবস্ত প্রস্তাব প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। এরপর তিনটি বন্দোবস্ত মামলা দায়ের করে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে জেলা প্রশাসন। ৭৯১ দশমিক ৭৮৩৫ একর খাস জমির সেলামি মূল্য ধরা হয় ১১ হাজার ১০০ কোটি ৮০ লাখ ৬৮ হাজার ২৫১ টাকা। ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর পুনরায় নামমাত্র মূল্যে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এছাড়াও বে-টার্মিনালে একইসঙ্গে ভিড়তে পারবে ৩৫ থেকে ৫০টি জাহাজ। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা করতে হলেও বে-টার্মিনালে এ জটিলতা থাকবে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের জট অনেকাংশে কমে যাবে। খরচ কমে গতি আসবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। বে-টার্মিনাল চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বহুগুণ বাড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। আবার মূল রফতানি বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে হয়। প্রতি বছর জাহাজ, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়তে থাকায় তা সামাল দেয়া চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রকল্প হাতে নিতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। অপর একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন জেটির সংখ্যা ১৭টি, যার মধ্যে ১১টি কন্টেইনার জেটি, বাকি ৬টি বাল্ক কার্গো জেটি। এছাড়াও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জেটিগুলো, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের জেটি ডলফিন ওয়েল জেটি, গ্রেইন সাইলো জেটি, সিমেন্ট ক্লিংকার জেটি, টিএসপি জেটি, সিইউএফএল জেটি, ড্রাই ডকের জেটি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব জেটি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ড্রাইডকের দুটি জেটি যা ১১ মিটার ড্রাফট পর্যন্ত জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে পারে, তা কার্যকর আছে। উপরন্ত প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি সি পোর্টের দুইটি জেটি, মারস্ক লাইনস’র লাল দিয়ার চরে চারটি জেটি এবং কর্ণফুলী ড্রাইডকের আরো ৪টি জেটি সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে নির্মাণাধীন বা নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। উপরোক্ত হিসাব মতে বন্দরের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় মোট প্রায় ৩৭টি জেটি রয়েছে। ৬টা নির্মাণাধীন/নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন জেটিগুলোসহ চট্টগ্রামে মোট জেটির সংখ্যা ৪৩টি।
২০১৯-২৩ সাল সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ১১টি কনটেইনার জেটি ও ৬টি কার্গো জেটি দিয়ে গড় হিসাবে বছরে ৩.৩ মিলিয়ন টি ই ইউ এবং ৬ কোটি টন বাল্ক কার্গো হেন্ডলিং করা হয়। আন্তর্জাতিক রিসেশনের কারণে বাৎসরিক মালামাল ওঠানামার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ সময়ের মধ্যে বন্দরে জাহাজ আগমনের পরিমাণ অনেক কমেছে। বর্তমানে কন্টেইনার এবং বাল্ক কার্গোর হ্রাসকৃত চাহিদার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭টি জেটির মধ্যে সবসময়ই দুই-চারটি জেটি অলস অবস্থায় বসে থাকে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সিমেন্ট ক্লিংকার, ড্রাইডক এবং কর্ণফুলী জেটিসহ অন্যান্য জেটিসমূহ কার্গোর অভাবে খালি থাকে। তাছাড়া পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ৩ জেটি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও সচরাচর জাহাজের দেখা মেলে না। মারস্ক লাইনস-এর জেটি চালু হলে বন্দর শতকরা ৪০ ভাগ কন্টেইনার কার্গো হারাবে। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অনুমোদিত জেটিগুলো যার মধ্যে কিছু কার্যকর, কিছু নির্মাণাধীন এবং কিছু নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সেগুলো পূর্ণভাবে চালু হলে দেশের বাৎসরিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি হবে চট্টগ্রাম বন্দরের ৩.৩ মিলিয়ন, মারস্ক লাইনস-এর ২.০ মিলিয়, কর্ণফুলী’র ২.০ মিলিয়ন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ১.০ মিলিয়ন, অর্থাৎ মোট ৮.৩ মিলিয়ন টিইইউএস ও এই ৮.৩ মিলিয়ন টিইইউ ক্যাপাসিটি সম্পন্ন জেটিগুলোর চাহিদা শতকরা মেটাতে আরও ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। মাতারবাড়ি ডিপসি পোর্ট যেখানে জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটি চালু হলে আরও ৩ মিলিয়ন টিইইউ হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি যোগ হবে। ফলে দেশের কনটেইনার জেটিগুলো বাৎসরিক মোট হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে প্রায় ১১.৩ মিলিয়ন টিইইউ, যার শতকরা চাহিদা মেটাতে বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় কমপক্ষে আরো ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে।
বাস্তব অবস্থা যখন এতটাই ভয়াবহ, অর্থাৎ যখন দেশের বিদ্যমান জেটি গুলি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে, বন্দর ও অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে জেটির জন্য বিনিয়োগকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার যেখানে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে, যেখানে দেশের কন্টেইনার কার্গো ও বাল্ক কার্গোর, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুপাতে বিদ্যমান জেটির সংখ্যা ও ক্যাপাসিটি অনেকগুণ বেশি এবং সাধারণ বিবেচনায়ও এটি পরিষ্কার যে বর্তমানে বন্দরের জেটি ও অন্যান্য বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন জেটিসমূহের শতকরা চাহিদা মেটাতে আরো ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি অপ্রয়োজনীয়, অনিশ্চিত এবং ব্যয়বহুল প্রকল্প বাদ দিতে বলেছিলেন। সেই অবস্থায় বে- টার্মিনালের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প যার অর্থনৈতিক সূচকসমূহ ওজজ, ইঈজ কোনোভোবেই ইতিবাচক নয় এবং যেটা গ্রহণ করলে জবয়ঁরৎবফ চড়ৎঃ ঈযধৎমবং এত বেশি হতে পারে, যার কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক দেশসমূহের বন্দরগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যেতে পারে, সেটা জাতির উপর চাপিয়ে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বই কিছুই নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বিশেষজ্ঞগণ এবং কনসালটেন্টসগণের বে-টার্মিনাল-এর ব্যাপারে যতগুলো সমীক্ষা করেছেন তার সবগুলোতেই নেতিবাচক সুপারিশ করেছেন। বর্তমান বন্দর নিজস্ব সুযোগ- সুবিধা ব্যবহার করে বছরে যে ২০০০ থেকে ২৫০০ হাজার কোটি টাকা উপার্জন করছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে বন্দর সে উপার্জনও হারাবে।
যদিও চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণে এক দশক আগে নেয়া নতুন ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্প নতুন করে গতি পাচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য প্রতীকী মূল্যে ৫০১ একর জমি দেয়ার প্রক্রিয়া গত মে মাসে চূড়ান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার প্রকল্পের ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক তৈরি এবং জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি তথা খনন কাজের জন্য ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদ।
বিশ্বব্যাংকের নতুন এই ঋণ অনুমোদনের সুবাদে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে গতি পাওয়ার বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। এই প্রকল্প এলাকা চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান টার্মিনাল এলাকার চেয়ে বড়। বন্দর জলসীমার শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের সাগরপার থেকে শুরু হবে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের সীমানা। যা গিয়ে শেষ হবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমণিঘাটে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রকল্প এলাকাটি প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা। বে-টার্মিনাল যে গতি পাচ্ছে, তা ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই ইতিবাচক। আমরা বহু আগেই এই টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম। কারণ, এটি চালু হলে কনটেইনার পরিবহন তথা পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যবসার খরচ কমবে। জটের মুখে পড়তে হবে না। বে-টার্মিনালে মূলত জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানো হবে। খোলা পণ্য সাগরে ওঠানো-নামানো গেলেও টার্মিনাল ছাড়া কনটেইনার ওঠানো-নামানো যায় না। রফতানি পণ্যের সিংহভাগ কনটেইনারে ভরে বিদেশে পাঠানো হয়। আবার শিল্পের কাঁচামালসহ মূল্যবান পণ্য কনটেইনারে করে আমদানি হয়। বর্তমানে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ৯৮ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনালে হয়। নতুন করে পতেঙ্গা টার্মিনালেও কনটেইনার ওঠানো-নামানো শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন বছরে তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ একক কনটেইনার পরিবহন হয়। বে-টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে এটি বন্দরের বিদ্যমান টার্মিনালের চেয়ে বেশি কনটেইনার পরিবহন করা যাবে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সীমাবদ্ধতা থাকায় বড় আকারের জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো যায় না। অবশ্য দিনের বেলায় জোয়ারের সময় জাহাজ ভেড়ানো যায়। বন্দরে এখন যেসব জাহাজ চলে, সেগুলো গড়ে দেড় হাজার একক কনটেইনার আনা-নেয়া করে। প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে চার হাজার একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে। জাহাজও ভেড়ানো যাবে দিনরাত যেকোনো সময়। বে-টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত আউটার রিং রোডের পাশে। কাছাকাছি রয়েছে রেললাইন। আবার অভ্যন্তরীণ নদীপথেও বে- টার্মিনাল থেকে সরাসরি যাওয়া যাবে সারাদেশে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স